গতকালই ভারত সরকারের পক্ষ থেকে 54 টি অ্যাপ্লিকেশন কে ব্যান করে দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে অধিক জনপ্রিয় ব্যাটেল রয়েল গেম গারিনা ফ্রী ফায়ার (Garena Free Fire) যেমন রয়েছে। তাদের সাথে রয়েছে বেশ কয়েক ধরনের ক্যামেরাও। তবে গারিনা ফ্রী ফায়ার ব্যান হয়ে যাওয়াতে হতবাক হয়েছেন অনেকেই। কারণ এই গেমের প্যারেন্ট কোম্পানি গারিনা প্রকৃতপক্ষে সিঙ্গাপুরের একটি কোম্পানি। চীনের সাথে কানেকশনের জন্য যে তথ্য উঠে আসছে সেটা আদতেই ঠিক নয়, এমনটাই দাবি করছেন অনেকে। তার সাথে এটাও বলা হচ্ছে গারিনা ফ্রী ফায়ার কে যদি ব্যান করে দেওয়া হয় তাহলে ব্যাটেলগ্রাউন্ডস মোবাইল ইন্ডিয়া (Battlegrounds Mobile India) কিভাবে এখনো পর্যন্ত টিকে রয়েছে গুগল প্লে স্টোরে! এখন আমরা এরই বেশ কয়েকটি কারণ জেনে নেব।
Battlegrounds Mobile India কেন ব্যান করা হলনা? আসল রহস্য টা কি?
1। পাবজি মোবাইল ব্যান হওয়ার মূল কারণ ছিল একটাই। সেটা হলো চীনের সাথে সংযোগ। প্রকৃতপক্ষে চীনের এক কোম্পানি, যার নাম টেনসেন্ট, তার উপর দায়িত্ব ছিল পাবজি মোবাইল ডিস্ট্রিবিউশনের। আর সেই কারণ দেখিয়ে মূলত ব্যান করে দেওয়া হয়েছিল পাবজি মোবাইল কে আমাদের দেশে। এর জন্যই পাবজি মোবাইল কে পরবর্তীকালে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে টেনসেন্ট এর সাথে সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে ক্রাফটন। আর ব্যাটেল গ্রাউন্ড মোবাইল ইন্ডিয়া নামে এই গেমকে লঞ্চ করা হয় ভারতে। আর ডিস্ট্রিবিউশনের দায়িত্ব থাকে Krafton-এর উপরেই। তাই এই গেম চীনের সাথে সংযোগের যে সমস্যায় পড়েছিল সেটা থেকে বেরিয়ে এসেছে এতদিনে।
2। পরবর্তী যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা ব্যাটেলগ্রাউন্ডস মোবাইল ইন্ডিয়া ফলো করছে তা হল এই গেম প্লেয়ারদের সমস্ত তথ্য লোকালি স্টোর করে রাখা। এর আগে চীনের অনেক সার্ভারেই ভারতীয় ইউজারদের অনেক তথ্য সেভ করে রাখা হতো। যার জন্য বড়সড় আপত্তি উঠেছিল ভারত সরকারের পক্ষ থেকে। সন্দেহ করা হচ্ছিল এইভাবে তথ্য সংরক্ষণ করে রাখার ফলে সেই তথ্য হ্যাক হয়ে যেতে পারে বা তার অপপ্রয়োগ হতে পারে। সেই জন্যই ব্যাটেলগ্রাউন্ডস মোবাইল ইন্ডিয়াতে আর সেই ভুলটা করেনি ক্রাফটন। তারা যাবতীয় তথ্য এবার থেকে সংরক্ষণ করে রাখছে দেশের মাটিতেই। চীনের সাথে ভারতীয় তথ্য শেয়ার হওয়ার কোনো সুযোগ তাই আর নেই।
3। এই সমস্ত সমস্যা গুলোর সাথে সাথে পাবজি মোবাইল ব্যান হওয়ার আরো অনেক সমস্যা ছিল। যার মধ্যে দেশের যুবসমাজ অবক্ষয়ের দিকে যেমন এগিয়ে যাচ্ছে এমন দাবি উঠেছিল। তার সাথে দাবি করা হয়েছিল এই গেম সকলের মধ্যে হিংসা ছড়িয়ে দিচ্ছে। এমন কি বাবা-মায়ের অনুমতি না নিয়ে অনেকেই এই গেম ঘন্টার পর ঘন্টা খেলে যাচ্ছে এমন তথ্যও উঠে আসছিল। যা চূড়ান্ত রকমের অস্বাস্থ্যকর।
এই সমস্যাগুলো মেটানোর জন্য ব্যাটেলগ্রাউন্ডস মোবাইল ইন্ডিয়ায় অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে। আনা হয়েছে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল এর সুবিধা। এমনকি ‘কিল’ শব্দটি কেও ব্যবহার করা হয়নি গেমের মধ্যে। তার পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে ‘ফিনিশ’ শব্দটিকে। রক্তের রংও পরিবর্তন করে করে সবুজ রং আনা হয়েছে। টাইম লিমিট এর মতো গুরুত্বপূর্ণ ফিচার যোগ করে দেওয়া হয়েছে। বারবার জানানো হচ্ছে এটি আসলে একটি ভার্চুয়াল জগতের গেম আর এর সাথে বাস্তবের কোন মিল নেই।
তাছাড়াও 18 বছরের নিচে কারোর বয়স হলে বাবা-মায়ের অনুমতি প্রয়োজন হচ্ছে এই গেম খেলার জন্য। তারই সাথে প্রত্যেকদিন 7000 টাকার বেশি ব্যাটেলগ্রাউন্ডস মোবাইল ইন্ডিয়াতে খরচ করাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাই সমস্ত কিছু মিলিয়ে যে সমস্ত বাজে দিক গুলো তুলে ধরা হয়েছিল এই গেমের, সেগুলো কে প্রতিরোধ করেই ব্যাটেলগ্রাউন্ডস মোবাইল ইন্ডিয়া কে লঞ্চ করা হয়েছে আমাদের দেশে। তাই মনে করা হচ্ছে এই সমস্ত আটঘাট বেঁধেই ব্যাটেলগ্রাউন্ডস মোবাইল ইন্ডিয়া লঞ্চ করা হয়েছে। আর এই গেম কে ব্যান করার হয়নি এই জন্যই।
তবে একথা জানিয়ে রাখা ভাল ইউজারদের কোনরকম সমস্যা হলে বা কোন রকম সমস্যার কথা যদি ভারত সরকারের মনে হয় তাহলে এই গেম কেও আবার তলব করা হতে পারে যেকোনো সময়ই। আর এই ধরণের কোনো তলবের জন্য Krafton কে তৈরি থাকতে বলা হয়েছিল আগেই।
ফ্রী ফায়ার ব্যান সম্পর্কে আপনার কি মতামত? এই রকমই গুরুত্বপূর্ণ টেক আপডেট মিস না করতে চাইলে আমাদের সঙ্গে থাকুন, শ্রেষ্ঠ থাকুন। প্রতিদিনের বাছাই করা গুরুত্বপূর্ণ টেক আপডেট WhatsApp-এ পেতে এখানে ক্লিক করুন!